ধন ও সৌভাগ্যের দেবী মা লক্ষ্মী, বাঙালির ঘরে ঘরে এনি পুঁজিতা হন দেবী পক্ষের শেষের এই পূর্ণিমাটিতে। লক্ষ্মীপূজো গৃহস্থের পূজো, যে রাতে পূজো হয়, সেটি কোজাগরী পূর্ণিমা।লক্ষ্মীমায়ের আরাধনায় সেজে ওঠে বাঙালি হিন্দুদের গৃহকোন, মঙ্গলঘট, ধানের ছড়ার সঙ্গে গৃহস্থের আঙিনায় শোভা পায় চালের গুঁড়োর আল্পনায় লক্ষ্মীর ছাপ।লক্ষ্মীপূজোর ভোগ বলতেই মনে আসে নাড়ু, খিচুড়ি, লাবড়া তো থাকেই, সঙ্গে ফলমূল ও নাড়ুর সম্ভার বিস্তীর্ণ।
ঘরে তৈরি নারকেল নাড়ু, চিড়ের নাড়ু, তিলের নাড়ু, মোয়া সবকিছুই অভূতপূর্ব। লক্ষ্মীপূজো মানেই বাড়িতে নানা ধরনের মিষ্টান্ন জাতীয় খাবারের লম্বা ফিরিস্তি।তার মধ্যেই অন্যতম হলো নাড়ু। কারণ এই পূজো মাত্রই বাহারি রঙের ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের নাড়ু, তাই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িতে নাড়ু তৈরির ধুম অতি স্বাভাবিক। যার চাহিদা এখনো অটুট।এগুলো ছাড়া যেন পুজোটাই অসম্পূর্ণ, এগুলো যে আজও আমাদের অতি প্রিয়।
লক্ষ্মী পূজো মাত্রেই ধন সম্পদ, সৌভাগ্য ও সৈন্দর্যের দেবী, বাংলায় শারদীয়া দুর্গোৎসবের পর আশ্বিনের শেষে পূর্ণিমা তিথিতে বাঙালির ঘরে ঘরে এই চিরন্তন প্রার্থনা। আল্পনা, ভোগপ্রসাদ, সব মিলিয়ে গৃহস্থালি মেতে উঠে আনন্দের সম্ভারে।কোজাগরী লক্ষ্মীপূজো, এক এক বঙ্গে পূজোর রীতি এক এক রকম,এই পুজোয় অনেক বাড়ীর ভোগে জোড়া ইলিশ রাখা হয়, এছাড়াও লুচি, পায়েস, মিষ্টির নানা আয়োজন থাকে মায়ের জন্য। পূর্ববঙ্গীয় রীতিতে এইদিন মাছের পাঁচ পদ রান্না হয়, আবার পশ্চিমবঙ্গীয় রীতিতে এইদিন পুরো নিরামিষ খাওয়া দাওয়ার প্রচলন আছে এই দেশে।
“লক্ষ্মী মানে শ্রী, সুরুচি।লক্ষ্মী সম্পদ আর সৌন্দর্যের দেবী। বৈদিক যুগে মহাশক্তি হিসাবে তাকে পূজো করা হত।তবে, পরবর্তীকালে ধন শক্তির মূর্তি নারায়ণের সঙ্গে তাকে জুড়ে দেওয়া হয়।” বলেছেন নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী। দেবীর নিকট ভালো ফলনের কামনাই এই পূজোর নৃতাত্বিক কারণ, এই পূজোর সাথে জড়িয়ে রয়েছে আল্পনা অর্থাৎ কামনার প্রতিচ্ছবি।
লক্ষ্মীপুজোয় যে আল্পনা দেওয়া হয়, তাতে থাকে মায়ের পায়ের ছাপও, বিশ্বাস ঐ পথেই তিনি প্রবেশ করবেন গৃহস্থের ঘরে। হিন্দু শাস্ত্র মতে, কোজাগরী পূর্ণিমার রাতে দেবীলক্ষ্মী ধনধান্যে ভরিয়ে দিতে ভক্ত গৃহে পূজা নিতে আসেন, তার আগমনে গৃহস্থ হয় পুন্য। কিছুদিন আগে দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গার আগমনে আনন্দময় হয়ে উঠেছিল ধরণী, চিন্ময়ীর বিদায় বার্তা ভুলে আবারো আনন্দে সামিল লক্ষ্মী পূজোর প্রস্তুতিতে।
অন্নপূর্ণার আলতারাঙা পদচিহ্ন আঁকা হবে ঘরে ঘরে, ফল ফুল মিষ্টি, নৈবিদ্য দিয়ে আরাধনা হবে মায়ের।
প্রার্থনা হবে–
এসো মা লক্ষ্মী বস ঘরে।
আমারি ঘরে থাকো আলো করে।
লক্ষ্মীপুজোয় মায়ের আগমনে গৃহস্থালী হয় অভূতপূর্ব, নব আনন্দের বিচিত্র সমাহারে সবাই মেতে উঠে, অভিনবত্ব ও পুরোনো নস্টালজিক মনভাব নিয়ে আবারো হাজির কোজাগরী তিথি, পৌরাণিক নিয়ম রীতি হোক কিংবা ভোগপ্রসাদ, কোনো কিছুতেই ত্রুটি রাখে না আপামর বাঙালি, নাড়ু হোক বা মিষ্টি, নিয়ম হোক বা আনন্দ, কোনোকিছুতেই সমারোহ কম নয়, অত্যাধুনিক ছাচে হলেও পৌরানিকতার আচ্ছাদনে কোজাগরী লক্ষ্মী পূজো আজও আমাদের প্রিয়, আজও আনন্দের।